অবশেষে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অল্প ভোটের ব্যবধানে চেয়ারম্যান পদে কাপ-পিরিছ প্রতিক নিয়ে বেসরকারীভাবে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপির বহিস্কৃত নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল আহমদ চৌধুরী। বুধবার দিবাগত রাত পোনে ১টায় এ ফলাফল ঘোষণা করেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্ণিং কর্মকর্তা স্বর্ণালী চক্রবর্তী। তবে তার নিকটতম আরো দুই প্রতিদ্বন্দি¦ প্রার্থী সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিন আহমদ (আনারস) ও সেবুল মিয়া (দোয়াত-কলম) এ ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন।
বুধবার ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হলেও ৭৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭৩টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। কিন্তু খাজাঞ্চি ইউনিয়নের নোয়ারাই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সেন্টারের ফলাফল ঘোষণায় দেরি হয়। এরমধ্যে ওই কেন্দ্রের ফলাফল সীটে কারো স্বাক্ষর না থাকায় ও ভোটের ব্যবধান কম থাকায় ফলাফল মানেন নি আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন। সাথে সাথে তার সমর্থকরা উপজেলা মাঠে বিক্ষোভ শুরু করেন। পাশাপাশি কাপ পিরিচের চেয়ারম্যান প্রার্থী সোহেল আহমদ চৌধুরী ও দোয়াত কলমের চেয়ারম্যান প্রার্থী সেবুল মিয়ার সমর্থকরাও মিছিল শুরু করে। দীর্ঘক্ষণ বাক-বিতন্ডার পর ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে ভোট পূন:গণনার আবেদন জানিয়ে সমর্থকদের নিয়ে চলে যান। পরে চেয়ারম্যান প্রার্থী সেবুল মিয়াও ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে সমর্থকদের নিয়ে চলে যান। কিন্তু বিক্ষোব্ধ জনতা মাঠ ছেড়ে চলে না যাওয়ায় রাত ১২টার দিকে পুলিশ-বিজিবি এসে বিক্ষোব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পৌণে ১টায় সহকারী রিটার্নিং কমকর্তা স্বর্ণালী চক্রবর্তি ফলাফল ঘোষণা করেন। এ সময় বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম নুনু মিয়াও উপস্থিত ছিলেন।
চেয়ারম্যান পদে সোহেল আহমদ চৌধুরী (কাপ-পিরিচ) ১৩ হাজার ৩২২ ভোট, গিয়াস উদ্দিন আহমদ (আনারস) প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ১২ হাজার ৯৬৮ ভোট, উপজেলা বিএনপি নেতা সেবুল মিয়া (দোয়াত-কলম) ১১ হাজার ৬৯৯ ভোট, আলতাব হোসেন (টেলিফোন) ৮হাজার ৭০৩ ভোট, গৌছ খান (কৈমাছ) ৫হাজার ৮৮৮ ভোট, শামসাদুর রহমান রাহিন (শালিক পাখি) ২হাজার ১৫০ ভোট, আব্দুর রুশন চোরগ আলী (ঘোড়া) ১হাজার ৬৪৪ ভোট, এস আলী এনামুল হক চৌধুরী (মোটরসাইকেল) ৯৪১ ভোট, সফিক উদ্দিন (উট) ৫১৮ ভোট, আকদ্দুছ আলী (হেলিকপ্টার) ৪০৩ ভোট পেয়েছেন।
এদিকে, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে করিমা বেগম কলস প্রতীকে ২৩ হাজার ৬৫৯ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগ নেত্রী ও সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জুলিয়া বেগম ফুটবল প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ১৮ হাজার ১৫৬ ভোট ও উপজেলা বিএনপি নেত্রী ও সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বেগম স্বপ্না শাহিন (প্রজাপতি) ১৫ হাজার ৩৪২ ভোট পেয়েছেন।
অপরদিকে, ভাইস চেয়ারম্যান পদে বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা যুবলীগ নেতা মুহিবুর রহমান সুইট। তিনি (মাইক) প্রতীকে পেয়েছেন ১৬ হাজার ৯৮৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনপি নেতা আল ইসলাহ’র ইসলাম উদ্দিন (বই) প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ১৩ হাজার ৫১২ ভোট, খাজাঞ্চী ইউনিয়ন বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রব (চশমা) ১১ হাজার ৪০ ভোট, বিশ^নাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মো. সিরাজ মিয়া (টিউবওয়েল) ৮হাজার ৩০৫ ভোট, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মোহাম্মদ কাওছার খান (তালা) ৪হাজার ৩২৯ ভোট, বিশ্বনাথ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পার্থ সারথি দাশ পাপ্পু (টিয়াপাখি) ৩হাজার ৭১ ভোট পেয়ছেন।
এরআগে বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উপজেলার ৭৪টি কেন্দ্র একটানা ব্যালেটের মাধ্যমে চলে ভোট গ্রহণ। সকালের শুরুতেই ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। দিন বাড়ার সাথে সাথে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা বাড়ে।