সিলেটের বিশ্বনাথে ‘অগঠনতান্ত্রিকভাবে ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে’ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির দুই নেতাকে সাময়িক বহিস্কারের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠি হয়েছে। বুধবার বিকেলে পৌর শহরের পুরাণ বাজারে একটি রেষ্টুরেন্টে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহ আসাদুজ্জামান আসাদ ও সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেন সদ্য সাময়িক বহিস্কৃত উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মতিন ও কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য কাউন্সিলর ফজর আলী।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আব্দুল মতিন বলেন, বিগত ২০১৮ সালের ১৩ জানুয়ারী জেলা কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটিতে আমি ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক এবং আমার সহযোদ্ধা কাউন্সিলর ফজর আলীকে কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে আমরা সংগঠনে সকল নিয়মকানুন মেনেই নিজেদের দায়িত্ব পালন করে আসছি। সম্প্রতি আমরা গণমাধ্যমের কল্যাণে দেখতে পাই আমাদের দু’জনকে সাময়িক বহিস্কার করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। কিন্তু কি কারণে আমরা বহিস্কার হলাম কিংবা এব্যাপারে আমাদেরকে বহিস্কারের পূর্বে শোকজও করা হয়। এমনকি আমাদেরকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে মর্মেও কোন ডকুমেন্ট দেওয়া হয়নি। একটি মহলের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ‘উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির কোন সভা আহবান না করেই এবং কমিটির সদস্যদের না জানিয়েই’ শুধুমাত্র উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজেদের একক ক্ষমতা বলে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক শৃংখলার ধারা ৪৭ (ঞ) মতে আমাদের (মতিন-ফজর)’কে স্ব-স্ব পদ থেকে সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিক ও অসাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় সাময়িক বহিষ্কার ও কারণ দর্শানোর জন্য বলেছেন গণমাধ্যমে প্রেরিত তাদের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে। অথচ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ধারা ৪৭ (ঙ) অনুচ্ছেদে সুস্পষ্টভারে বলা হয়েছে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কারণ দর্শানোর জন্য সুযোগ দানের উদ্দেশ্যে যুক্তিসঙ্গত সময় দিয়ে সাধারণ সম্পাদক পোস্টাল রেজিষ্ট্রেশন যোগে নোটিশ দিতে বাধ্য থাকিবেন।
লিখিত বক্তব্যে আব্দুল মতিন আরোও বলেন, গঠনতন্ত্রের ৪৭ (চ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংগঠনের কোন সদস্যের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শাস্তি প্রদানের জন্য আওয়ামী লীগের নিন্মতম যে কোন শাখা বা যে কোন সদস্যের লিখিত অভিযোগপত্র পাওয়ার পর উপজেলা বা থানা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ নিজেদের সিদ্ধান্ত’সহ উক্ত অনুরোধপত্র জেলা কার্যনির্বাহী সংসদের নিকট পাঠাবেনন। জেলা কার্যনির্বাহী সংসদ এ সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে উক্ত বিষয়ে বিবেচনাপূর্বক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নিকট প্রেরণ করবেন। ওই প্রক্রিয়া ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগ স্বয়ং সংগঠনের কোন সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আবশ্যকতা বোধ করিলে জেলা কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত জ্ঞাপন করিয়া বিষয়টি বিবেচনাপূর্বক চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের নিকট প্রেরণ করিবে। এছাড়া গঠনতন্ত্রের ৪৭ (দ) অনুচ্ছেদে সুষ্পষ্টভাবে বলা হযেছে প্রতিষ্ঠানের কোন সদস্যের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করিবার ক্ষমতা কেবল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের থাকিবে। তবে এক্ষেত্রে ধারা ১৭ (চ)’র ব্যত্তয় গঠিবে না। এখানে আমাদের গঠনতন্ত্রের যে ধারা অনুযায়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আমাদের (মতিন-ফজর)’কে বহিষ্কারের নির্দেশনা দিয়েছেন, তারা দলের গঠনতন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়েছেন। তারা এটা ভূলে গেছেন যে কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়া কাউকেই দল থেকে বহিষ্কার কিংবা অব্যাহতি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ব্যক্তি স্বার্থে ঈর্ষান্বিত ও রাগের বশীভূত হয়ে যে ঘোষণা দিয়েছেন তা হাস্যকর ও অগ্রহণযোগ্য। তাই সাংবাদিকদের মাধ্যমেই বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক’র অগঠনতান্ত্রিক ও অসাংগঠনিকভাবে সাময়িক বহিষ্কারের ঘোষণা অবিলম্বে প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানাই।
নিজের বক্তব্যে কাউন্সিলর ফজর আলী বলেন, বিশ্বনাথ উপজেলা আওযামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আমাদের দু’জন (মতিন-ফজর)’কে রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জনা আমাদের শত্রুপক্ষ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তারা (আসাদ-ফারুক) নিজেদের পায়দা হাদিসের জন্য যে বহিষ্কার আদেশ দিয়েছেন, অবিলম্বে তা প্রত্যাহার না করলে আমরা সেই বহিষ্কারাদেশ’র বিরুদ্ধে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’র সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথা কেন্দ্রীয় সংসদের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করব। আর বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার হউক বা না হউক, আমরা নৌকার একজন কর্মী হিসেবে আমৃত্যু ‘জয় বাংলা’র শ্লোগান দিয়েই যাব। এখান থেকে আমাদেরকে বহিস্কার করার ক্ষমতা কারোও নেই।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, পৌর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য আজব আলী, শ্রমিক লীগ নেতা সিতাব আলী, পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি রফিক আলী, যুবলীগ নেতা নাসির উদ্দিন, জমির মিয়া প্রমুখ।